গর্ভপাত কখন করা যায়? এর নিয়ম কি? গর্ভপাতের সঠিক আইন জানুন

গর্ভপাত করা কি সঠিক? গর্ভপাত কখন করা যায়? আর কখন করলে তা আইনত অপরাধ মানা হয়? ভারতীয় আইন কি বলে গর্ভপাত নিয়ে? জেনে নিন গর্ভপাতের সঠিক আইন ও নিয়ম।

ভারতের প্রায় অনেক মহিলাই জেনে বুঝে গর্ভাবস্থার সমাপ্তি ঘটান অর্থাৎ গর্ভপাত করিয়ে থাকেন। যা কিনা গর্ভাবস্থার পর কুড়ি সপ্তাহ হিসাব করা হয়ে থাকে। ভারত এমন একটি দেশ যেখানে গরীব এবং অশিক্ষার মতো বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাজের বিভিন্ন রকমের খারাপ প্রভাব ফেলে থাকে।

1971 তে মেডিকেল টার্মিনেশন অফ প্রেগনেন্সি (এম টি পি / M.T.P.) অ্যাক্ট কে মেনে নেওয়ার পর থেকে ভারতের গর্ভপাত কেবল কিছু বিষয়ের উপরেই নির্ভর করে বৈধ আছে। তার সাথে সাথে ভারতে গর্ভপাতের বিষয়টিকে বৈধ বানানোর জন্য প্রথমে কিছু দেশে এই নিয়ম বানানো হয়।

গর্ভপাত কখন করা যায়? এর নিয়ম কি? গর্ভপাতের সঠিক আইন জানুন
গর্ভপাত কখন করা যায়? এর নিয়ম কি? গর্ভপাতের সঠিক আইন জানুন

এই অধিনিয়ম এর মাধ্যমে গর্ভপাতকে বৈধ করার জন্য মুখ্য উদ্দেশ্য প্রত্যেক মহিলাকে গর্ভাবস্থা সমাপ্ত করার মধ্যে দিয়ে প্রচলিত স্বাস্থ্য সংক্রান্ত দেখভাল করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সুরক্ষিত সমাপ্তি সেবা করার মধ্যে দিয়ে এবং তার সামর্থ্যকে বাড়ানো যেতে পারে।

চলুন তাহলে জানা যাক, ভারতে গর্ভপাতের আইন সম্পর্কে:

কিছু কিছু ক্ষেত্রে গর্ভপাত বৈধ হলেও সব ক্ষেত্রে কিন্তু গর্ভপাত বৈধ নয়। এর জন্য আইন রয়েছে। তবে গর্ভপাত কখন এবং কি পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে করা যেতে পারে, সেটা আজকে জানা যাক।

গর্ভপাত কখন করা যেতে পারে?

১) অধিনিয়ম এর ধারা 3 অনুসারে গর্ভপাত করা যেতে পারে।

২) চিকিৎসকের অনুমতি এবং অনুমোদন দ্বারা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে গর্ভপাত করা যেতে পারে।

I) যখন মহিলার শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য তার জীবন বিপদের মুখে পড়তে পারে, অথবা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে, তখন কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে গর্ভপাত করানো যেতে পারে।

II) যখন গর্ভাবস্থায় মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুতর অবস্থায় আঘাত থেকে বাঁচার জন্য গর্ভপাত করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে মনে করা হয়।

III) যখন গর্ভাবস্থা থাকে, তখন প্রতিনিয়ত এই বিষয়ে অনেক চিন্তা থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে বাচ্চার এবং মায়ের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যদি সেই গর্ভবতী মা জীবনযাপন করে থাকেন, তাহলে সেখানেও কিন্তু গর্ভপাত করা যেতে পারে।

IV) যখন বেশ গুরুতর অবস্থা তৈরি হয়, যেমন ধরুন বাচ্চা শারীরিক এবং মানসিক অসামান্যতা এর সাথে সেই বাচ্চা জন্ম গ্রহণ করতে পারে, যার পরিণাম স্বরূপ বাচ্চার অনেক ক্ষতি হতে পারে, বা বিকৃত বাচ্চা জন্ম নিতে পারে, সে ক্ষেত্রে গর্ভপাত করা যেতে পারে। তবে সেটার  জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটা জরুরি।

V) যখন কোন গর্ভবতী মহিলার জীবন বাঁচানোর জন্য অথবা তার স্বাস্থ্যের উপর স্থায়ী কোনো আঘাত যাতে না হয়, সে দিক থেকে বাঁচানোর জন্য এই গর্ভপাত অবশ্যই প্রয়োজন।

৩) মানবীয় আধারের উপর নির্ভর করে গর্ভপাত করা যেতে পারে।

৪) যখন কোন গর্ভাবস্থা যৌন অপরাধ অথবা ধর্ষণের মতো অপরাধের জন্য হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে গর্ভপাত করানো যেতে পারে।

৫) যদি চিকিৎসার মাধ্যমে জানা যায় যে, সেই গর্ভস্থ বাচ্চা জন্মানোর সময় রোগ গ্রস্থ হয়ে জন্মাবে এবং কোনরকম সমস্যা নিয়ে জন্মাবে তাহলে আগে থেকেই গর্ভপাত করানো যেতে পারে।

গর্ভপাত এর ক্ষেত্রে অনুমতি দেওয়ার ওপর সুপ্রিম কোর্টের চিন্তা ধারা: 

সুপ্রিম কোর্ট 2017 তে একটি কিশোরী ধর্ষণ পীড়িতা কে 24 সপ্তাহের গর্ভাবস্থা সমাপ্তি করার জন্য অনুমতি দিয়ে ছিল, অর্থাৎ গর্ভপাত করার জন্য অনুমতি দিয়েছিল। বাস্তবে আদালতে, আদালত বহুমূল্য সময় এর ক্ষতির জন্য দুঃখ এবং রাগ প্রকাশ করেছে।

যার মধ্যে সেই কিশোরী মেয়ের টির গর্ভাবস্থা কে প্রথমেই সমাপ্ত করা যেতে পারত, অথবা প্রথমে গর্ভপাত করানো যেতে পারত, 24 সপ্তাহ পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতে হত না।

শীর্ষ আদালত 2016 তে একটি মহিলার 24 সপ্তাহের ভ্রূণ এর সমাপ্তি করার অনুমতি দিয়েছিল, যা কিনা কুড়ি সপ্তাহের সময়সীমার বিরুদ্ধে ছিল।

কোর্ট এটা বলেছিল যে, গুরুতর অসামান্যতা ভ্রূণ কে রেখে দেওয়ার মানে হল সেই ভ্রুণ অথবা বাচ্চা এবং মা দুজনের জন্য বিপদ আছে, মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে, আর সেই কারণে মাকে এমন জটিলতম সমস্যা থেকে বাঁচানোর জন্য গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

তবে এর মানে এটা নয় যে, গর্ভাবস্থার সমাপ্তি অথবা গর্ভপাত সমস্ত পরিস্থিতিতে সম্ভব বা তার জন্য অনুমতি পাওয়া যেতে পারে। বাস্তবে কিন্তু এটা কখনোই সম্ভব নয়। এই সমস্ত বিষয়ে বিভিন্ন রকম মামলা, পরিস্থিতি এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে অনুমতি দেওয়া হয়ে থাকে।

গর্ভপাত কখন করা যাবে না? 

অধিনিয়ম এর ধারা 3 অনুসারে:- 

১) একজন নাবালিকা গর্ভবতী মেয়ে তার আইনি অভিভাবকের লিখিত সম্মতি ছাড়া গর্ভপাত করাতে পারবেন না।

২) কোন মহিলার সহমতির এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে তার গর্ভের সন্তানকে মেরে ফেলা যাবে না অথবা গর্ভপাত করানো যাবে না।

সুপ্রিম কোর্ট গর্ভপাতের জন্য অনুমতি দেয় নি যে সমস্ত বিষয়ের উপর: 

2017 তে একজন গর্ভবতী মহিলা তার 26 সপ্তাহের গর্ভাবস্থা কে সমাপ্ত করার জন্য সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছিলেন, যেখানে বাচ্চা ডাউন সিনড্রোম রোগের পীড়িত ছিল।

তাছাড়া আদালত এই ঘোষনা করে এই বিষয়টি একেবারে খারিজ করে দিয়েছিল যে, আমাদের হাতে একটি জীবন রয়েছে, আর এইভাবে একটি ভ্রূণকে মেরে ফেলা কখনোই উচিত বিকল্প হবে না।

গর্ভপাত কোথায় করানো যেতে পারে?

অধিনিয়মের ধারা 4 অনুসারে বিশেষরূপে উল্লেখযোগ্য যে, গর্ভাবস্থার সমাপ্তি করার জন্য অথবা গর্ভপাত করানোর জন্য কিছু নিশ্চিত জায়গা ছাড়া, কোন অন্য জায়গাতে করানো যাবে না।

সরকার দ্বারা স্থাপিত এক হাসপাতাল অথবা রক্ষনাবেক্ষনের জায়গা অথবা সরকার দ্বারা অনুমোদিত যে জায়গা অথবা মুখ্য চিকিৎসা অধিকারী, জেলা স্বাস্থ্য অধিকারী এর সাথে সরকার দ্বারা গঠিত একটি জেলা স্তরের হয়ে থাকে, সেখানে করানো যেতে পারে।

গর্ভপাত করানোর জন্য স্বামীর অনুমতির প্রয়োজন আছে কি?

সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে যে, যেখানে একজন স্বামী তার স্ত্রীর সম্মতি ছাড়া, ইচ্ছা ছাড়া গর্ভপাত করাতে পারবেন না। গর্ভধারণ করা অথবা সমাপ্ত করা বা গর্ভপাত করার জন্য মহিলাদের পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে এবং সহমতি গুরুত্বপূর্ণ রয়েছে।

কোন স্বামী অথবা কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে বাচ্চা জন্ম দেওয়ার জন্য বাধ্য করতে পারেন না। এছাড়াও আদালত এটাও বলেছে যে, কোন স্ত্রী এমন কোন মেশিন নয়, যেখানে কাঁচামাল রাখা হবে আর উৎপাদন তৈরি হয়ে বেরিয়ে আসবে।

গর্ভধারণ করা আর বাচ্চা জন্ম দেওয়া তার সাথে একটা মহিলার মা হওয়ার জন্য সেই মহিলার মানসিক এবং শারীরিক রুপে তৈরি থাকাটা সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অবাঞ্চিত / নিয়োজিত গর্ভাবস্থা কেবল মাত্র সেই গর্ভবতী মহিলার শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর অনেকখানি প্রভাব বিস্তার করে।

সেই কারণে কোনোভাবেই কোনো মহিলাকে তার স্বামী অথবা স্বামীর পরিবার সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য জোর করতে পারবেন না, অথবা বাধ্য করতে পারবেন না।

তবে ভারতে গর্ভপাতের মতো ঘটনা নেহাত কম নয়, সেক্ষেত্রে যথোপযুক্ত কারণ থাকাটা বাঞ্ছনীয়। না হলে সুস্থ স্বাভাবিক এবং মানসিক দিক থেকে তৈরি থাকা মহিলা বাচ্চা জন্ম অবশ্যই দিতে পারবেন।

একটা সময় সীমার পর গর্ভপাত করা কোন মতেই সম্ভব নয়। তাই প্রতিক্ষেত্রে একটি জীবন মেরে ফেলার অধিকার কারো নেই। তার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ কারণ থাকাটা অবশ্যই প্রয়োজন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top