আজীবন কারাবাস এর শাস্তি কত বছর পর্যন্ত হতে পারে? জানুন আইন কি বলছে

আপনি কি জানেন আজীবন কারাবাস হলে কত বছরের শাস্তি হয়ে থাকে? আজীবন কারাবাস অথবা যাবজ্জীবন কারাবাস হওয়ায় কি হয়? জানুন আজীবন কারাবাস এর শাস্তি সম্পর্কে সমস্ত আইনি নিয়ম।

সমাজে অপরাধীদের বন্দি করে রেখে সমাজকে অপরাধমুক্ত করার জন্য বিশেষভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে আইন। অপরাধীদের জন্য আর তার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন রকমের অপরাধের ওপর আলাদা আলাদা শাস্তি ঘোষণা করা হয় সেই অপরাধীর। তার মধ্যে যাবজ্জীবন কারাবাস অথবা আজীবন কারাবাস একটি উল্লেখযোগ্য সাজা অথবা শাস্তি।

আজীবন কারাবাস অথবা Life Imprisonment এর শাস্তি গুরুতর অপরাধের জন্য দেওয়া হয়। ভারতীয় দণ্ড সংহিতা আইপিসি 1860, অপরাধীর শাস্তির বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ভারতীয় দণ্ড সংহিতা এর ধারা 53 তে বলা হয়েছে যে, শাস্তি কত রকমের হতে পারে ? অপরাধ এর উপর নির্ভর করে বিভিন্ন রকমের শাস্তি হতে পারে।

আজীবন কারাবাস এর শাস্তি কত বছর পর্যন্ত হতে পারে? জানুন আইন
আজীবন কারাবাস এর শাস্তি কত বছর পর্যন্ত হতে পারে? জানুন আইন

ভারতীয় দণ্ড সংহিতা ধারা 53 তে শাস্তির বিভিন্ন রকমের প্রকার বলা হয়েছে। ভারতীয় দণ্ড সংহিতা অনুসারে মোট পাঁচ রকমের শাস্তির বিধান রয়েছে।

১) মৃত্যুদণ্ড,

২) আজীবন কারাবাস অথবা যাবজ্জীবন কারাবাস,

৩) কারাবাস (এই কারাবাস আবার দুই রকমের হয়ে থাকে, যেমন প্রথমত সশ্রম কারাদণ্ড অথবা কারাবাস, আর দ্বিতীয়তঃ কোন শ্রম ছাড়া কারাদণ্ড অথবা কারাবাস)।

৪) সম্পত্তির সমঅপহরণ,

৫) জরিমানা।

আজীবন কারাবাস অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সময় সীমা:

অপরাধ এর উপর ভিত্তি করে দেখা যায় যে, যাবজ্জীবন কারাবাস অথবা আজীবন কারাবাস এর সময়সীমা সম্বন্ধে কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। যেমন ধরুন বলা যায় যে, এই আজীবন কারাবাস এর জন্য ১৪ বছর অথবা ২০ বছর সময় হয়ে থাকে কিন্তু এসব ভুল ধারণা। কেননা আজীবন কারাবাস এর অর্থ হল সাজা প্রাপ্ত ব্যাক্তি তার বাকি জীবনকাল পর্যন্ত জেলের মধ্যে থাকবেন।

যখন কোন আদালত কোন অপরাধের জন্য কোন ব্যক্তিকে আজীবন কারাবাস এর শাস্তি শুনিয়ে থাকে, তখন বিধান এর সমক্ষে এই শাস্তি সময়সীমা অর্থাৎ সাজা প্রাপ্ত ব্যক্তির শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এই সময়সীমা থাকবে অর্থাৎ সেই ব্যক্তি তার জীবনের শেষ যে সময়টুকু রয়েছে সেই সময়টুকু জেলের মধ্যেই থাকবেন।

আর জেলের মধ্যেই তার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারবেন। এই আজীবন কারাবাস এর অর্থ হল যে, যার ব্যাখ্যা সুপ্রিম কোর্ট ও তার রায় ঘোষণা তে বলেছে।

শাস্তি কম করার জন্য সরকারের অধিকার:

কখনো কখনো দেখা যায় যে, আজীবন কারাবাস এর শাস্তি পাওয়া ব্যক্তিকে ১৪ বছর অথবা ২০ বছর পর্যন্ত সেই সাজা ভোগ করার পর রেহাই দিয়ে দেওয়া হয় অর্থাৎ তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

তাছাড়া তাকে আজীবন কারাবাস এর রূপে তার সম্পূর্ণ জীবন জেলের মধ্যেই কাটানোর শাস্তি হয়েছিল কিন্তু সমর্থিত সরকার নিশ্চিত মানদণ্ডের  উপর কোন ব্যক্তির শাস্তি কম করার ক্ষমতা রাখতে পারে।

এটাই কারণ যে, আমরা জানি যে, আজীবন কারাবাস এর সাজা প্রাপ্ত ব্যাক্তি ১৪ বছর অথবা ২০ বছর পর ছাড়া পেয়েছেন। ভারতীয় দণ্ড সংহিতা ধারা 55-57 তে সরকারের দণ্ডাদেশ তে শাস্তি কম করার অধিকার দেওয়া হয়েছে।

এই অধিনিয়ম এর ধারা 55 তে বলা হয়েছে, “প্রত্যেক মামলাতে, যাতে আজীবন কারাবাসের শাস্তির আদেশ দেওয়া হয়েছে, অপরাধীর সম্মতি ছাড়াও সঠিক সরকার শাস্তি কে এমন সময় সীমার জন্য যা কিনা ১৪ বছর থেকে বেশি হবে না। দুটোর মধ্যে থেকে কোন কারাবাসের শাস্তি কম করা যেতে পারে।” 

যেখানে সঠিক সরকার থেকে তাৎপর্য এই যে, এমন সরকার থেকে যার অন্তর্গত মামলা এসে থাকে, যেমন ধরুন কেন্দ্র সরকার অথবা রাজ্য সরকার।

এইভাবে ভারতীয় দণ্ড সংহিতা ধারা 57 কোন প্রয়োজন এর জন্য আজীবন কারাবাস এর গণনা করে থাকে। ধারা 57 বলে যে “দন্ডবিধি গুলির ভিন্ন ভিন্ন গণনা করার ক্ষেত্রে আজীবন কারাবাস কে ২০ বছর কারাবাসের তুলনায় গণনা করা যাবে।”

এর অর্থ হলো, যখন কোনো প্রয়োজন অনুসারে আজীবন কারাবাস এর গণনা করার প্রয়োজনীয়তা হবে, তখন তাকে ২০ বছরের সমান মনে করা হবে।

এর মানে এটা নয় যে, আজীবন কারাবাস অথবা যাবজ্জীবন কারাবাস ২০ বছরের হয়ে থাকে। পরিবর্তে যদি কোন গণনা করা হয়, আজীবন কারাবাস কে ২০ বছর এর সমান মনে করা হয়।

গণনা করার প্রয়োজনীয়তা সেই পরিস্থিতিতে হতে পারে, যখন কোন ব্যক্তি কে দ্বিগুণ শাস্তি দেওয়া হয়। আবার কারো ক্ষেত্রে জরিমানা না ভরার পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত সময়ের জন্য কারাবাসে রাখা যেতে পারে।

শাস্তি কম করতে পারে সরকার:

দণ্ড বিধান সংহিতা 1973 সিআরপিসি (CrPC) এর ধারা 433, সঠিক সরকার দ্বারা দণ্ডাদেশ এর লঘুকরণ অথবা কম করার বিধান দেওয়া হয়েছে। দণ্ডবিধান সংহিতা 1973 সিআরপিসি এর ধারা 433 বলে যে, “দণ্ডাদেশকে লঘুকরণ এর ক্ষমতা সঠিক সরকার শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তির সম্মতি ছাড়া করা যেতে পারে।”

১) মৃত্যুদণ্ডের আদেশ ভারতীয় দণ্ড সংহিতা 1860 এর 45 দ্বারা অন্য শাস্তি রূপে কম করা যেতে পারে।

২) আজীবন কারাবাস এর দণ্ডাদেশ এর ১৪ বছর থেকে অনধিক সময় সীমা কারাবাস এ অথবা জরিমানা রূপে শাস্তি কম করা যেতে পারে অথবা শাস্তি লঘুকরণ করা যেতে পারে।

৩) কঠিন কারাবাস এর দণ্ডাদেশ এর এমন সময় সীমা বিনা শ্রম এর কারাবাস দেওয়া, যার জন্য সেই ব্যক্তি কে শাস্তি দেওয়া যেতে পারে অথবা জরিমানা রূপে সেই শাস্তি কম করাও যেতে পারে।

৪) বিনা শ্রম এর কারাবাস এর দণ্ডাদেশ কে জরিমানা রূপে সেই শাস্তি কম করা যেতে পারে।

উপরোক্ত বিষয় গুলি অনুসারে সরকারের সাজা কম করার ক্ষমতা রয়েছে। শাস্তি চলাকালীন যদি সেই অভিযুক্ত ব্যক্তি অথবা কয়েদির আচরণ যদি খুবই ভালো থাকে, তার আধার এর উপর নির্ভর করে আজীবন কারাবাস এর শাস্তি পাওয়া সেই ব্যক্তির কিছু বছরের শাস্তি বাদ দেওয়া যেতে পারে।

সরকার সেই শাস্তি কম করেও দিতে পারে। অর্থাৎ বলা যেতে পারে কিছু বছর শাস্তি পাওয়ার পর সরকার সেই ব্যক্তির সাজা অথবা শাস্তি লঘুকরণ বা শাস্তি কম করার মধ্যে দিয়ে সম্পূর্ণ রূপে রেহাই বা ছেড়ে দিতে পারে, সেই ব্যক্তি কে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top