Chaitra Navratri 2024: চৈত্র নবরাত্রিতে কি করা উচিৎ আর কি উচিৎ নয়, জেনে নিন

দেবী দুর্গা সর্বশক্তির উৎস, অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তির সূচনা করেছিলেন তিনি। দেবী দুর্গার আরাধনা চিরাচরিতভাবে শরৎকালেই হয় না, বছরে মোট চারবার হয়ে থাকে দেবী দুর্গার আরাধনা। হিন্দু ধর্ম অনুসারে প্রতিটি ঋতু পরিবর্তনের সময় দুর্গাপূজা করার বিধান রয়েছে।

যেমন ধরুন শারদীয়া নবরাত্রি, এছাড়া আষাঢ়  নবরাত্রি, মাঘ নবরাত্রি আর সর্বশেষ চৈত্র নবরাত্রি। আবার এমন ভাবে কিন্তু বসন্তকালে পালিত হয় চৈত্র নবরাত্রি। এটি আবার বসন্ত নবরাত্রি নামেও অনেকেই জানেন।

এই নবরাত্রিতে দেবী দুর্গার সকল ভক্তরা টানা নয় দিন ধরে মা দুর্গার বিভিন্ন রূপের উপাসনা করে থাকেন। মনে করা হয় যে, এই নবরাত্রির দিন গুলিতে মায়ের দর্শন এবং পুজো করলে বিশেষ শুভ ফল পাওয়া যায়।

চৈত্র নবরাত্রিতে কি করা উচিৎ আর কি উচিৎ নয়, জেনে নিন
চৈত্র নবরাত্রিতে কি করা উচিৎ আর কি উচিৎ নয়, জেনে নিন

জীবনের সাফল্য, সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি অর্জন করা যায়। এই উপলক্ষে অনেকেই বাড়িতে একটি ঘট স্থাপন করে এই নবরাত্রীর ব্রত পালন করে থাকেন।

তবে নবরাত্রির ব্রত পালন করেন বাঙ্গালীদের থেকে অবাঙালিরা বেশি। তবে পরিবারের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি বজায় রাখতে নবরাত্রির এই সময়ে সঠিক নিয়ম রীতি পালন করতে হয়।

এই শুভ সময়ে কি কাজ করা উচিত নয় আর কোনগুলি করা উচিত সে সম্পর্কে হয়তো অনেকেই জানেন না। এমন শুভ দিন, যে শুভ দিন গুলিতে সংসারের সকলের মঙ্গল কামনায় আমরা যে কাজগুলি করতে পারি আর করতে পারি না সে সম্পর্কে অবগত হওয়া যাক।

চৈত্র নবরাত্রি তে যে কাজগুলি করবেন: 

১. নবরাত্রির নয় দিন ধরে পূজা করার বিধান রয়েছে। এই সময় নয় দিনের মধ্যে বাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।

২. নবরাত্রির সময় প্রতিদিন দেবী দুর্গাকে দর্শন করতে হবে, এর ফলে মনের সকল ইচ্ছা পূর্ণ হয়। তবে থাকতে হবে মনের মধ্যে ভক্তি, নিষ্ঠা আর নির্লোভ মনোবাসনা।

৩. নবরাত্রিতে আপনি যদি নয় দিন ব্রত রাখতে না পারেন তবে নবরাত্রির প্রথম দিন এবং শেষ দিনে ব্রত রাখতে পারেন, তার পাশাপাশি দেবীর উপাসনা করুন, আপনার সকল মনের ইচ্ছা পূর্ণ করবেন মা দুর্গা।

৪. নবরাত্রির এই কদিন সময়ের মধ্যে কুমারী মেয়েদের অবশ্যই আপনার সাধ্যমত খাওয়াতে পারেন। এর ফলে সংসারে কোনদিন অর্থের অভাব হবে না বলে মনে করা হয়।

৫. নবরাত্রির সমস্ত দিনে সূর্য উদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠে গঙ্গা নদীতে স্নান করতে পারেন। তবে যদিও এটি সম্ভব না হয়ে থাকে, তাহলে আপনি আপনার স্নানের জলে কয়েক ফোঁটা গঙ্গাজল মিশিয়ে স্নান করতে পারেন। কথিত আছে যে এটি করলে আপনার অতীতের যে সমস্ত পাপগুলি রয়েছে সেগুলি ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে যাবে।

৬. দুর্গা সপ্তসতী ও দুর্গা চালিশা পাঠ করুন। এর ফলে আপনার স্বাস্থ্যের উপকার তো হবেই তার পাশাপাশি মানসিক শান্তিও বজায় থাকবে। যা একটি সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের জন্য প্রয়োজন।

৭. পুজোর জায়গায় অখন্ড জ্যোতি অথবা প্রদীপ জ্বালান, এটি করলে আপনার ভাগ্য কিন্তু প্রদীপের মতই উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।

৮. রাতে নব দূর্গা জাগরণের আয়োজন করতে পারেন, এর ফলে দেবী দুর্গার আশীর্বাদ বর্ষিত হবে আপনার এবং আপনার পরিবারের সকল সদস্যের উপর।

৯. দেবী দুর্গাকে লাল ওড়না অথবা লাল কাপড়, ফল, ফুল আর ষোলো সিঙ্গার জিনিসপত্র অবশ্যই অর্পণ করুন এমনটা করলে সৌভাগ্য আসে।

১০. আপনার বাড়ির সদর দরজা অর্থাৎ প্রধান প্রবেশপথে আম পাতা রাখতে পারেন বা দরজার উপরে আম পাতার তোরণ লাগাতে পারেন।

১১. সমগ্র বাড়িতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখুন।

১২. এই সময়ে ব্রহ্মচর্য পালন করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। তাই নিজেকে একেবারে ব্রহ্মচারীর মত করে তুলুন নয় দিন পর্যন্ত। দেখবেন মনের প্রশান্তির পাশাপাশি দেবীকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন, এই ব্রহ্মচর্য বজায় রাখার মধ্যে দিয়ে।

চৈত্র নবরাত্রির উপবাসে খাওয়া নিয়ে এই ভুলগুলি করবেন না

নবরাত্রির এই নয় দিনে যেগুলি করবেন না:

১. নবরাত্রির এই নয় দিন যাবত পাখিদের জন্য খাদ্যশস্য দান করুন, তারা আপনাকে আশীর্বাদ দেবে। এমনটা শুধুমাত্র যে এই নবরাত্রির নয় দিনে করতে হবে তা কিন্তু নয় এই দিনটা তে তো আপনি অবশ্যই অবশ্যই করবেন, তবে সারা বছর যদি আপনি পারেন আপনার সাধ্যমত পাখিদের খাদ্য শস্য দান করতে পারেন।

২. নবরাত্রিতে নিরামিষ খাবার খাওয়া উচিত, এছাড়াও রসুন, পেঁয়াজ এবং মদ্যপান করা থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকতে হবে।

৩. বাড়িতে আগত কোন ব্যক্তি, অতিথি অথবা ভিক্ষুকদের শ্রদ্ধার সঙ্গে আপ্যায়ন করুন এবং তাদের খাবার সরবরাহ করুন। এর ফলে মা দুর্গা সন্তুষ্ট হবে এবং ভক্তদের উপরে আশীর্বাদ বর্ষণ করবেন।

৪. অযথা রাগারাগি কোনভাবেই করা যাবে না। কারোর উপরে তেমন চোটপাট করা যাবে না, কটু কথা বলা যাবে না, গালাগালি করা যাবে না।

৫. নবরাত্রি সময়ে কোন চামড়ার তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করা একেবারেই উচিত নয়।

৬. চুল, দাড়ি, গোঁফ, নখ কাটা যাবে না।

৭. এই সময়ে রাগ, নিষ্ঠুরতা, থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকবেন। নিজেকে উজাড় করে দিলে তবেই কিন্তু আপনি দেবীর কৃপা পেতে পারেন।

চৈত্র নবরাত্রিতে এই কাজগুলি ভুলেও করবেন না

 নবরাত্রির সময় ঘট স্থাপন করবেন কিভাবে?

অনেক ভক্তরা বাড়িতে দেবী দুর্গার একটি প্রতিমা অথবা ছবি রাখেন তার পাশাপাশি ঘট স্থাপন করে দেবীকে সন্তুষ্ট করার সম্পূর্ণ প্রচেষ্টা করেন। ঘট স্থাপনের পাশাপাশি আপনি দেবীর ঘট ও মন্দির কেও সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলতে পারেন। এটা কিন্তু অবশ্যই প্রয়োজন। বিভিন্ন ধরনের অলংকার ও লাল ওড়না দিয়ে দেবী দুর্গাকে সাজাতে হবে।

দেবী দুর্গার প্রতিমা অথবা ছবি থাকাটা অবশ্যই প্রয়োজন। এছাড়াও লাল চুড়ি, সিদুর, কুমকুম, মেহেন্দি, টিপ, আলতা, আয়না, চিরুনি, অবশ্যই রাখতে হবে। এছাড়াও দেবীর মূর্তি স্থাপনের জন্য একটি নতুন লাল কাপড় অর্পণ করুন।

এরপর মা দুর্গাকে কিছু শুকনো ফল, যেমন ধরুন বাদাম, কিসমিস, খেজুর এর সাথে সাথে মাখন, এলাচ, লবঙ্গ, চিনি ও মিষ্টি নিবেদন করতে পারেন।

মন্দির ও বাড়িতে তেলের প্রদীপ জ্বালানোর পাশাপাশি ঘি এর প্রদীপ জ্বালানোর ঐতিহ্য বহূ শতাব্দী প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। নবরাত্রির সময় দেবী দুর্গার সম্মান জানাতে প্রদীপ বা অখন্ড জ্যোতি জ্বালানো শুভ বলে হয় মনে করা হয়।

এই প্রদীপের আলোয় বাড়ি ঘর আলোকিত হওয়ার পাশাপাশি ভক্তদের ভবিষ্যৎও উজ্জ্বল হয়। তবে অখন্ড জ্যোতির জন্য খাঁটি ঘি, বড় প্রদীপ সেটা পিতলের প্রদীপ হলে খুবই ভালো হয় এবং কিছুটা চাল লাগে।

এইভাবে কিন্তু সহজেই আপনি বাড়িতে নবরাত্রির জন্য ঘট স্থাপন করতে পারেন। এক্ষেত্রে পুরোহিত আপনি ডাকতেই পারেন অথবা নিজে থেকেই ভক্তি ও নিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে এই ঘট নিজেই স্থাপন করতে পারবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top